শাহনেওয়াজ শাহ্, স্টাফ রিপোর্টার: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে মাদক অন্যান্য বৈধ মালামালের মতোই বিক্রি হচ্ছে। পাড়া মহল্লাতে যেমন দু’একটি মুদিমালের দোকান রয়েছে তেমনি এ উপজেলার প্রতিটি পাড়ায় দু’একটা মাদকের স্পট রয়েছে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে অন্তত ২০০টি মাদকের স্পট রয়েছে। এই স্পটগুলোতে দিনেরাত বিক্রি করা হচ্ছে ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল, স্কোপসহ নানান অবৈধ মাদকদ্রব। তবে বহন সুবিধাজনক হওয়ায় ইয়াবার বেচাকেনা সবচেয়ে বেশি। প্রতিটি গ্রামে চলছে সর্বনাশা ইয়াবা সেবন। সেবনকারীদের অধিকাংশই উঠতি বয়সী তরুণ। অতিরিক্ত ইয়াবা সেবন করে অনেক তরুন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। কোথাও যেন কোনো বাঁধা নেই, দেখার যেন কেউ নেই।
ভারতের সঙ্গে ৩৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে বিজয়নগর উপজেলার। দীর্ঘ সীমান্ত থাকার সুবাদে এখানকার বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। এই উপজেলায় ১ হাজারেরও অধিক মাদক ব্যাবসায়ী রয়েছে। অল্প টাকা ও সল্প শ্রমে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার প্রতিনিয়ত বাড়ছে মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা। মাদক ব্যাবসা তাদের কাছে কোনো অপরাধই মনে হয় না। মাদক ব্যাবসায়ী ও মাদকের স্পট গুলোর বাড়ার সাথে সমান তালে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাদক সেবনকারীও। স্থানীয় মাদক সেবনকারী ছাড়াও জেলা শহর থেকে প্রতিদিন শতশত মোটরসাইকেল যোগে মাদকসেবীরা এসে মাদক সেবন করে। কেউ আবার যাওয়ার সময় সাথে করে নিয়েও যায়।
সীমান্তবর্তী এই উপজেলার বাতাসে মাদকের বিষাক্ত গন্ধ রয়েছে। সিমান্ত এলাকায় ডুকলেই যেখানে সেখানে দেখা মিলে স্কোপ, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকের খালি বোতল। রাস্তার পাশে, স্কুলের মাঠে, রেলাইনের পাশে, ব্রীজ কালবাটের নিছে, খোলা আকাশের নিছে, বাজারের পাশে, এমনকি কবরস্থানেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মাদকের খালি বোতল।
জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগরে মাদক প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে না এসে বরং আরও বাড়ছে। বিজয়নগরে সবচেয়ে বেশি মাদকের প্রভাব থাকলেও জেলা পুলিশের তথ্য মতে সবচেয়ে কম মাদক মামলা রেকর্ড হচ্ছে এই উপজেলায়। অনেক সময় পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মাদক পাচারকারী আটক হলেও মাদকের ডিলার ও স্পট গুলোর চালানকারীরা অন্তরালে থেকে যায়।
জনমনে প্রশ্ন কিভাবে কোনো বাঁধা ছাড়াই প্রকাশ্যে চলছে চিহ্নিত এসব মাদকের স্পটগুলো। কেনোই ভাবেই থামানো যাচ্ছে না অবৈধ মাদকদ্রব্য চোরাচালান ও সেবন?মাদক যেখানে ওপেন সিক্রেট।
উপজেলার মুকুন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা সেনাসদস্য মোঃ মোক্তার হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত আমাদের এলাকায় মদকের আনাগোনা ছিল কিন্তু এখন মাদকের প্রভাব খুবই বেশি। আমার বাড়ির পাশের পারিবারিক কবরস্থান ও মসজিদ-মাদরাসা গুলো মাদক থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। ঘর থেকে বের হলেই মাদকের খালি বোতল দেখা যায়। সন্ধ্যা হলেই এলাকার মধ্যে বহিরাগতদের আগমন ঘটে। মাদক দিনেদিনে বেড়েই চলছে। মাদকের কারণে এই সমাজ ও বিভিন্ন পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ভারত থেকে কিভাবে মাদকগুলো দেশে প্রবেশ করছে? কারা আনিতেছে? কিভাবে পাচার হচ্ছে? কারা ব্যাবসা করিতেছে? কিভাবে ইন্ডিয়া থেকে মাদকগুলো আমাদের গ্রামপর্যায়ে এনে খুচরা বিক্রি করিতেছে। প্রশাসন চাইলেই এই এলাকা থেকে মাদকমুক্ত করা সম্ভব। প্রশাসন চাইলেই আমাদের সুন্দর সমাজ ও সুন্দর পরিবেশ গড়া সম্ভব। পুলিশ ও বিজিবি তাহারা মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কমিশনের বিনিময়ে এই কঠোর অভিযান থেকে বিরত রহিয়াছে, পুলিশ ও বিজিবি সহযোগিতাই এগুলি হচ্ছে আর না হয়তো তারা যদি কঠোর পদক্ষেপ নিতো তাহলে বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে কোন মাদকদ্রব্য প্রবেশ করতে পারত না, তাই প্রশাসনের কাছে আমার একটাই দাবী তারা যেন তাদের কমিশন না খেয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করে এবং সীমান্তের মাদকের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নজরদারি বাড়ায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, মাদক ব্যাবসায়ীদের বড় একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এরা টাকা দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করে রাখে। তাই এদের ভয়ে কেউ কথা বলতে চাই না। পুলিশ প্রশাসন যেন দেখেও না দেখার অভিনয় করে। অনেক পুলিশের আবার মাদক ব্যাবসায়ীদের সাথে সুসম্পর্ক দেখা যায়। এরা মাদক ব্যাবসায়ীদের সাথে দোকানপাটে চা পান করে, আড্ডা দেয়। মাদকের স্পট গুলো থেকে পুলিশ মাসে মাসে চাঁদা নেয়। নয়তো মাদকের স্পটগুলো চলতে পারত না। বিজিবিকে মাদকব্যাবসায়ীদের মোটরসাইকেল ব্যাবহার করতে দেখা যায়। পুলিশ, বিজিবি ও মাদকব্যাবসায়ী একে অপরের সহযোগেই চলছে মাদকের রমরমা ব্যাবসা।
বিজয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, মাদকের স্পট গুলোতে আমাদের নিয়মিত টহল চলিতেছে। আমি নিজেও সীমান্ত এলাকার স্পট গুলোতে টহলে যায়। সীমান্ত এলাকায় মাদকের প্রবাহ কমাতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সীমান্তবর্তী এলাকার জনগণ যদি সচেতন না হয়, তাহলে মাদক ও চোরাচালান পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়।’
তিনি আরও জানান, ‘মাদক মামলার আসামিদের অধিকাংশই গ্রেফতারের কয়েকদিনের মধ্যেই জামিনে মুক্তি পাচ্ছে। এতে করে তারা সহজেই আবার মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে।’ মাদক যেখানে ওপেন সিক্রে